Tuesday, February 7, 2012

হাইকু


হাইকু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হাইকু ( একবচনে "হাইকি") একধরনের সংক্ষিপ্ত জাপানি কবিতা । তিনটি পংক্তিতে যথাক্রমে ৭, ৫ এবং ৭ জাপানি শ্বাসাঘাত মোরাস মিলে মোট ১৭ মোরাসের সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তে ঘটিত মনের ভাব প্রকাশ করা হয় । জাপানি হাইকু একটি লাইনে লিখিত হয় । সেই বাক্যটিতে ১৭টি মোরাস থাকে। সাধারণত একটি ছবি বর্ণনা করার জন্য হাইকু লিখিত হয় । মোরাস ও মাত্রা একই ব্যাপার নয় । ইউরোপিয়গণ ১৭ মোরাসকে ১৭ দল মনে করে হাইকু লেখার সূত্রপাত করে । তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন হয় । মোরাস, দল ও মাত্রা এক-একটি ভাষার নিজস্ব শ্বাস অনুসারী । সেই অনুজায়ী ১২ মোরাসে ১৭ সিলেবল হয় । ইউরোপে ইমেজিস্ট আন্দোলনের পর ১৭ সিলেবলের পরিবর্তে আরো বেশী সিলেবলের হাইকু লেখা শুরু হয়েছে । জ্যাক কেরুয়াক প্রমুখ মার্কিন কবিগণ স্বীকার করেছেন যে মার্কিন উচ্চারণ জাপানি উচ্চারণ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক । তাঁরা ১৭ দল ও তিন বাক্য্ বন্ধন অস্বীকার করে হাইকু লিখেছেন ।
  • কোবায়িশি ইশার হাইকু: জোনাকি উড়ে যায়/এত দ্রুত এত নিঃশব্দে/আলোটুকু ফেলে যায়
  • মাৎসুও বাশোর হাইকু: প্রজাপতি আতর মাখছে/নিজের ডানায়/অর্কিডের সুবাস
    • য়োসা বুসন-এর হাইকু: কুঠারের এক ঘা/পাইনগাছের গন্ধ/শীতের বনানীতে

হাইকুর ইতিহাস

  • ব্যাশোপূর্ব কাল (১৫-১৬ শতক)
  • ব্যাশো মাৎসুউ (১৬৪৪-১৬৯৪)
  • বুসন ইয়োসা (১৭১৬-১৭৮৩)
  • শিকি মাসাওকা (১৮৬৭-১৯০২)
  • কিওশি তাকাহামা (১৮৭৪-১৯৫৯)
  • ইপাকিরো নাকাৎসুকা (১৮৮৭-১৯৪৬)
  • সেকিতেয়ি হারা (১৮৮৯-১৯৫১)
  • হিসাজো সুগিতা (১৮৯০-১৯৪৬)
  • সুজু তাকানো (১৮৯৩-১৯৭৬)
  • কাকিয়ো তোমিজাওয়া (১৯০২-১৯৬২)
  • কোয়ি নাগাতা (১৯০০-১৯৯৭)

Sunday, February 5, 2012

হাইকু : একটি আন্দোলন একটি কাব্য-ঐতিহ্য

হাইকু : একটি আন্দোলন একটি কাব্য-ঐতিহ্য

- সিদ্দিক মাহমুদুর রহমান

(Please click here Read more » for the full article)

হাইকু কাব্য জাপানের রাজ দরবারে ৯ম শতকে সৃষ্ট তাংকা কাব্যের পথ ধরে এসেছে। তাংকা ৯ম থেকে ১২শ’, এই তিন শতক জুড়ে জাপানে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এই দীর্ঘ সময় জুড়ে চলেছিল এর বিবর্তন। ধর্ম ও রাজন্যবর্গের বিষয়াবলী নিয়ে রচিত তাংকা মূলত ছিল পাঁচ পঙিক্তর, ৫-৭-৫-৭-৭ শব্দগুচ্ছের। এই যুগে একটি কবিতা ধারাবাহিকভাবে লেখা হতো, কেউ লিখতেন প্রথম তিন পঙিক্ত (৫-৭-৫), অন্য কবি তার বাকি ৭-৭ শব্দের দুই পঙিক্ত সংযুক্ত করতেন। এরপর ভিন্ন একজন কবি ৭-৭ শব্দের পঙিক্তর সঙ্গে যোগ করতেন আরও ৫-৭-৫ শব্দের আরও তিনটি পঙিক্ত। এই শিকল পদ্ধতির সংযুক্ত কবিতা রচনাবলীকে বলা হতো রেংগা। যা অনেক সময় শতাধিক তাংকার সংযোজনে গড়ে উঠত।

কবিতার প্রথম অংশকে বলা হতো হোক্কু বা উদ্বোধনী কবিতা। এই সুরের উপরেই গড়ে উঠত মূল কবিতা। হোক্কুর কবিতার কবিরা পরবর্তী কবিদের কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মান ও সম্ভ্রম লাভ করেছেন। উনিশ শতকের মধ্যে, মাসাওকা শি-কি’র সময় থেকে হোক্কু পৃথক কবিতা হিসেবে রচিত ও পাঠ করা হতে থাকে। এই হোক্কু থেকেই বর্তমানের হাইকু শব্দটির উদ্ভব হয়েছে।

Thursday, January 12, 2012

জাপানি ছন্দঃ হাইকু



জাপানি ছন্দঃ হাইকু


আমি ছন্দ নিয়ে কিছু আলোচনা করে কিছু পোস্ট দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবো। কিন্তু আমার ছন্দ আলোচনা, বিশ্লেষণ অনেকেরই ভালো লাগে নি। এজন্য তারা আমাকে তাদের নানা মন্তব্যে আমাকে হেয় করবার চেষ্টা করেছে। তাই ভাবলাম ওদের ইচ্ছেরই প্রতিফলন ঘটুক, ওগুলো নিয়ে আর লিখবো না। তবে ছন্দের যে গভীর প্রেমে আমি মজেছি তাতে ছন্দ থেকে আমার দূরে থাকাটা হয়তো আর হবে না। আমি ছন্দ নিয়েই থাকবো তবে অন্যভাবে। 

প্রত্যেক সাহিত্যেই কবিতার ছন্দ-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত হয় ঐ ভাষার দ্বারা, ভাষার উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য দ্বারা। জাপানি ছন্দও এই নীতির ব্যতিক্রম না। জাপানি ভাষায় স্বরবর্ণ সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। এগুলোর সবগুলোই হ্রস্ব। জাপানি ভাষায় কোন দীর্ঘস্বর কিংবা অই্‌, উউ্‌ এর মতন বদ্ধস্বর নেই। জাপানি ভাষায় কোন ব্যঞ্জনস্বরের উচ্চারণও হসন্ত যুক্ত না, অর্থাৎ সবই মুক্তস্বর, কোন বদ্ধস্বর নেই। তাই জাপানি সাহিত্যে ছন্দের হিসেবে কোন প্রকার জটিলতাই নেই। ফলে জাপানি সাহিত্যে ছন্দশাস্ত্রও খুব একটা গড়ে অঠে নি।


জাপানি সাহিত্যে কবিতাগুলো হয়ে থাকে খুবই সরল প্রকৃতির। ছন্দবৈচিত্রতার দরুন জাপানি ছন্দকে শ্রেণিকরণ করা যায় না, তবে মাত্রার পর্বসংখ্যা অনুযায়ী জাপানি কবিতাকে মোটামুটি পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় - হাইকু, তানকা, চোকা, সেদোকা এবং ইয়ামো।


হাইকু (একবচনে "হাইকি") একধরনের জাপানি কবিতা যাতে মাত্র তিনটি পঙ্‌ক্তিতে যথাক্রমে ৫, ৭ এবং ৫ মোরাসের মোট ১৭ মোরাসের সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তে ঘটিত মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। সাধারণত একটি ছবি বর্ণনা করার জন্য হাইকু লেখা হয়ে থাকে। মোরাস ও মাত্রা একই ব্যাপার নয়। কিন্তু ইযোরোপীয়রা ১৭ মাত্রার হিসেবে হাইকু লেখার সূত্রপাত করে। তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন হয়। মোরাস, দল ও মাত্রা এক-একটি ভাষার নিজস্ব শ্বাস অনুসারী সংজ্ঞায়িত হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী ১২ মোরাসে ১৭ দল হয় ইউরোপে ইমেজিস্ট আন্দোলনের পর ১৭ দলের পরিবর্তে আরো বেশী দলের হাইকু লেখা শুরু হয়েছে। জ্যাক কেরুয়াক প্রমুখ মার্কিন কবিগণ স্বীকার করেছেন যে মার্কিন উচ্চারণ জাপানি উচ্চারণ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। তাই তারা ১৭ দল ও তিন বাক্য বন্ধন অস্বীকার করে হাইকু লেখার সূত্রপাত ঘটান।


মাৎসু বাশো
র "old pond" বা পুরোনো পুকুর হাইকিটা দেখে নিইঃ
古池や蛙飛込む水の音
ふるいけやかわずとびこむみずのおと
উচ্চারণে একে বিন্যস্ত করলে পাইঃ
fu-ru-i-ke ya (৫)
ka-wa-zu to-bi-ko-mu (৭)
mi-zu no o-to (৫)
ইংরেজি অনুবাদঃ
old pond . . .
a frog leaps in
water’s sound
এর বাংলা রূপটা দাঁড়ায়ঃ
পুরোনো পুকুর
ব্যাঙের লাফ
জলের শব্দ।
এটা আক্ষরিক অনুবাদ, হাইকুর ছন্দ রক্ষা করা হয় নি।। হাইকুর ছন্দে রবি ঠাকুর একে ভাবানুবাদ করে লিখেছেনঃ
পুরোনো ডোবা,
দাদুরী লাফালো যে,
জলেতে ধ্বনি।
এবার এই ছবিটার বর্ণনা করে একটা হাইকির চেষ্টা করিঃ
বাদরো ঝরে
কালো কাকেরো 'পরে,
ভিজে গেলো যে!

Tuesday, January 10, 2012

হাইকু সিরিজ

হাইকু সিরিজ

-

১.
রাস্তা ছেঁড়া
অপলক নজর
খুঁজছে ডেরা ।।
২.
পিঁপড়ে দল
খাবার দেখলেই
নেবার ছল ।।
৩.
শীতের মাস
মাঠে ও ময়দানে
সবজি চাষ ।।
৪.
নয়া পরব
পোড় খাওয়া মাটি
হলো সরব ।।
৫.
ভ্রান্ত রথ
চলছে অগোছালো
হারাবে পথ ।।
৬.
বৃষ্টি-জল
স্ফটিক-সদৃশ
শীত-শীতল।।
৭.
মাছের ঝাঁক
স্রোতের বিপরীতে
নিয়েছে বাঁক ।।
৮.
জংলী ঘাস
আপনিই গজায়
করি না চাষ।।
৯.
কচুর পাতা
বাদল বরিষণে
ওটাই ছাতা।।
১০.
প্রাচীন বট
ধূসর পৃথিবীতে
সবুজ পট ।।
১১.
চতুর কাক
ভাতের ধান্ধায়
করছে হাঁক ।।
১২.
শিমুল তুলো
হাওয়ায় উড়লে
নরম ধুলো।।