বিশ্ব সাহিত্যে হাইকু
লিখেছেনঃ নীরব পথিক (তারিখঃ ১আগষ্ট, ২০১০)
যুগের সাথে সাথে সাহিত্য বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়। কবি বা সাহিত্যিকের
সাথে সাথে বদল ঘটে লেখার ধারার। কিন্তু কিছু ধারা চিরকাল অমলিন, অবিকৃত,
বিশুদ্ধ থাকে।
বাংলা সাহিত্যে যেমন চর্যাপদ এখনো স্বমহিমায় সম্মান কুড়াতে সক্ষম ঠিক
তেমনি বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন ধারা আছে যে গুলো যুগ যুগ ধরে ঠিক শূন্য
বিন্দুতেই দাঁড়িয়ে আছে। যুগ যায় বছর যায় কিন্তু সাহিত্যের ধারা বদলায় না।
এমন একটি ধারার নাম ‘হাইকু’।
'হাইকু' পৃথিবীর সংক্ষিপ্ততম কাব্যরূপ। ‘হাইকু’ বহুবচন। একবচন ‘হাইকি’
থেকেই ‘হাইকু’ এসেছে। জাপানী ভাষায় কবিতা লেখার একটি পদ্ধতি যা বিশেষ একটি
রীতিকে মেনে লেখা হয়ে থাকে। পূর্বে হাইকুকে বলা হত 'হোক্কু' যার অর্থ ছিল
'রেঙ্গা' নামে শৃঙ্খলাবদ্ধ কবিতার প্রথমভাগ। ‘হাইকু’ বিশেষ একটি রীতির উপর
দাঁড়িয়ে গড়ে ওঠে।তিনটি পংক্তিতে ৫-৭-৫ বিন্যাসে ১৭টি মাত্রায় এই কবিতা গুলো
লেখা হয় । অর্থাৎ প্রথম লাইনে ৫টি, দ্বিতীয় লাইনে ৭টি আর শেষের লাইনে ৫টি
সিলেবল নিয়ে মোট ১৭ সিলেবালে হাইকু রচিত হয়।
শুধু এই নিয়ম মানলে হাইকু রচিত হয় না; এর আরো একটি শর্ত আছে;- হাইকু হতে
হবে প্রকৃতি নির্ভর। অর্থাৎ প্রকৃতিকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে হাইকুর শরীর।
জাপানিরা ১৭ মাত্রার এই সংক্ষিপ্ত পরিসরের মধ্যেই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ছোট
বড় সমস্ত কিছুর জায়গা দিয়েছেন। যাতে প্রকৃতিকে সামনে রেখে নানা বিদ বিষয়
উপস্থাপিত হয়। এবার একটা হাইকু লক্ষ করি,
সোনালী ক্ষেত (৫)
কৃষাণের খাটুনি (৭)
ভরে না পেট (৫)
কৃষাণের খাটুনি (৭)
ভরে না পেট (৫)
এখানে ৫-৭-৫ পুরোপুরি নিয়ম মানা হয়েছে। এটাই হাইকু।
জাপানিদের হাইকুর জনপ্রিয়তা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম ইংলিশরা হাইকুকে আত্মস্থ করতে চেষ্টা করে কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। কারণ তাদের 'হাইকু' ৫-৭-৫ রীতিকে বজায় রাখাতে পারে নাই। ফলে সে সব 'হাইকু' কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে।
জাপানিদের হাইকুর জনপ্রিয়তা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম ইংলিশরা হাইকুকে আত্মস্থ করতে চেষ্টা করে কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। কারণ তাদের 'হাইকু' ৫-৭-৫ রীতিকে বজায় রাখাতে পারে নাই। ফলে সে সব 'হাইকু' কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে।
জাপানিদের দেখা দেখি বাংলাদেশেও 'হাইকু' চর্চা শুরু হয়; কিন্তু তা আর
হাইকুর ৫-৭-৫ রীতিতে সীমাবদ্ধ থাকে নাই। এখানে এক লাইন লিখেও হাইকুর নামে
চালিয়ে দেওয়া হয় যা হাইকুর রীতি বিরোধী। বাংলা সাহিত্যে হাসনাত আবদুল হাই
'কিওতো হাইকু' নামে একটি গ্রন্থ রচণা করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও তিনি অনেক
ক্ষেত্রে হাইকুর ৫-৭-৫ রীতি ধরে রাখতে পারেন নাই। তার রচিত কয়েকটি হাইকু :
১)
চড়ুইয়ের লুকোচুরি
গাছের শাখায়
ঝরছে পাতা সব
২)
নোঙ্গর করা তরী
দুলছে মৃদু ঢেউ
বরফ গলে ধীরে
৩)
বরফে এটো-কাঁটা
কাছেই একটি কাক
ঝাড়ছে শুধু ডানা
চড়ুইয়ের লুকোচুরি
গাছের শাখায়
ঝরছে পাতা সব
২)
নোঙ্গর করা তরী
দুলছে মৃদু ঢেউ
বরফ গলে ধীরে
৩)
বরফে এটো-কাঁটা
কাছেই একটি কাক
ঝাড়ছে শুধু ডানা
উপরের তিনটির কোনটিই ৫-৭-৫ নিয়ম মানে নাই। তাই এগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠাই
স্বাভাবিক। এগুলো কি হাইকু? ৫-৭-৫ নিয়ম বলে এগুলো হাইকু নয়। তাহলে এগুলো
কি? হতে পারে অনুকাব্য।
'হাইকু' সারা বিশ্ব জয় করুক, বেঁচে থাকুক স্বমহিমায়। হাইকুর সঠিক চর্চা হোক বাংলা ভাষায়।
আমার কিছু 'হাইকু' :
#১
রুদ্র বিকেল
ঝলমল তনুতে
দুঃখ ঝরে
#১
রুদ্র বিকেল
ঝলমল তনুতে
দুঃখ ঝরে
#২
খেয়ার মাঝি
হাতে বৈঠা-লগি
মাছের চুক্তি
খেয়ার মাঝি
হাতে বৈঠা-লগি
মাছের চুক্তি
#৩
সোনালী ক্ষেত
কৃষাণের খাটুনি
ভরে না পেট
সোনালী ক্ষেত
কৃষাণের খাটুনি
ভরে না পেট
#৪
ফুল ফুটেছে
ঘ্রাণ নিয়েছে মাছি
ঠক বঞ্চিত
ফুল ফুটেছে
ঘ্রাণ নিয়েছে মাছি
ঠক বঞ্চিত
#৫
বাসর রাত
ঘুমহীন প্রাণীর
সার্থক স্বপ্ন
বাসর রাত
ঘুমহীন প্রাণীর
সার্থক স্বপ্ন
এখন এ পর্যন্তই...
সামনে আরো 'হাইকু' দেবো...
হাইকুর জয় হোক।
সামনে আরো 'হাইকু' দেবো...
হাইকুর জয় হোক।
১৭ শ্রাবণ, ১৪১৭
জিগাতলা, ঢাকা
জিগাতলা, ঢাকা
Source: http://www.choturmatrik.com