Tuesday, February 7, 2012

হাইকু


হাইকু

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হাইকু ( একবচনে "হাইকি") একধরনের সংক্ষিপ্ত জাপানি কবিতা । তিনটি পংক্তিতে যথাক্রমে ৭, ৫ এবং ৭ জাপানি শ্বাসাঘাত মোরাস মিলে মোট ১৭ মোরাসের সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তে ঘটিত মনের ভাব প্রকাশ করা হয় । জাপানি হাইকু একটি লাইনে লিখিত হয় । সেই বাক্যটিতে ১৭টি মোরাস থাকে। সাধারণত একটি ছবি বর্ণনা করার জন্য হাইকু লিখিত হয় । মোরাস ও মাত্রা একই ব্যাপার নয় । ইউরোপিয়গণ ১৭ মোরাসকে ১৭ দল মনে করে হাইকু লেখার সূত্রপাত করে । তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন হয় । মোরাস, দল ও মাত্রা এক-একটি ভাষার নিজস্ব শ্বাস অনুসারী । সেই অনুজায়ী ১২ মোরাসে ১৭ সিলেবল হয় । ইউরোপে ইমেজিস্ট আন্দোলনের পর ১৭ সিলেবলের পরিবর্তে আরো বেশী সিলেবলের হাইকু লেখা শুরু হয়েছে । জ্যাক কেরুয়াক প্রমুখ মার্কিন কবিগণ স্বীকার করেছেন যে মার্কিন উচ্চারণ জাপানি উচ্চারণ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক । তাঁরা ১৭ দল ও তিন বাক্য্ বন্ধন অস্বীকার করে হাইকু লিখেছেন ।
  • কোবায়িশি ইশার হাইকু: জোনাকি উড়ে যায়/এত দ্রুত এত নিঃশব্দে/আলোটুকু ফেলে যায়
  • মাৎসুও বাশোর হাইকু: প্রজাপতি আতর মাখছে/নিজের ডানায়/অর্কিডের সুবাস
    • য়োসা বুসন-এর হাইকু: কুঠারের এক ঘা/পাইনগাছের গন্ধ/শীতের বনানীতে

হাইকুর ইতিহাস

  • ব্যাশোপূর্ব কাল (১৫-১৬ শতক)
  • ব্যাশো মাৎসুউ (১৬৪৪-১৬৯৪)
  • বুসন ইয়োসা (১৭১৬-১৭৮৩)
  • শিকি মাসাওকা (১৮৬৭-১৯০২)
  • কিওশি তাকাহামা (১৮৭৪-১৯৫৯)
  • ইপাকিরো নাকাৎসুকা (১৮৮৭-১৯৪৬)
  • সেকিতেয়ি হারা (১৮৮৯-১৯৫১)
  • হিসাজো সুগিতা (১৮৯০-১৯৪৬)
  • সুজু তাকানো (১৮৯৩-১৯৭৬)
  • কাকিয়ো তোমিজাওয়া (১৯০২-১৯৬২)
  • কোয়ি নাগাতা (১৯০০-১৯৯৭)

Sunday, February 5, 2012

হাইকু : একটি আন্দোলন একটি কাব্য-ঐতিহ্য

হাইকু : একটি আন্দোলন একটি কাব্য-ঐতিহ্য

- সিদ্দিক মাহমুদুর রহমান

(Please click here Read more » for the full article)

হাইকু কাব্য জাপানের রাজ দরবারে ৯ম শতকে সৃষ্ট তাংকা কাব্যের পথ ধরে এসেছে। তাংকা ৯ম থেকে ১২শ’, এই তিন শতক জুড়ে জাপানে অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিল। এই দীর্ঘ সময় জুড়ে চলেছিল এর বিবর্তন। ধর্ম ও রাজন্যবর্গের বিষয়াবলী নিয়ে রচিত তাংকা মূলত ছিল পাঁচ পঙিক্তর, ৫-৭-৫-৭-৭ শব্দগুচ্ছের। এই যুগে একটি কবিতা ধারাবাহিকভাবে লেখা হতো, কেউ লিখতেন প্রথম তিন পঙিক্ত (৫-৭-৫), অন্য কবি তার বাকি ৭-৭ শব্দের দুই পঙিক্ত সংযুক্ত করতেন। এরপর ভিন্ন একজন কবি ৭-৭ শব্দের পঙিক্তর সঙ্গে যোগ করতেন আরও ৫-৭-৫ শব্দের আরও তিনটি পঙিক্ত। এই শিকল পদ্ধতির সংযুক্ত কবিতা রচনাবলীকে বলা হতো রেংগা। যা অনেক সময় শতাধিক তাংকার সংযোজনে গড়ে উঠত।

কবিতার প্রথম অংশকে বলা হতো হোক্কু বা উদ্বোধনী কবিতা। এই সুরের উপরেই গড়ে উঠত মূল কবিতা। হোক্কুর কবিতার কবিরা পরবর্তী কবিদের কাছ থেকে যথেষ্ট সম্মান ও সম্ভ্রম লাভ করেছেন। উনিশ শতকের মধ্যে, মাসাওকা শি-কি’র সময় থেকে হোক্কু পৃথক কবিতা হিসেবে রচিত ও পাঠ করা হতে থাকে। এই হোক্কু থেকেই বর্তমানের হাইকু শব্দটির উদ্ভব হয়েছে।

Thursday, January 12, 2012

জাপানি ছন্দঃ হাইকু



জাপানি ছন্দঃ হাইকু


আমি ছন্দ নিয়ে কিছু আলোচনা করে কিছু পোস্ট দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে এগিয়ে যাবো। কিন্তু আমার ছন্দ আলোচনা, বিশ্লেষণ অনেকেরই ভালো লাগে নি। এজন্য তারা আমাকে তাদের নানা মন্তব্যে আমাকে হেয় করবার চেষ্টা করেছে। তাই ভাবলাম ওদের ইচ্ছেরই প্রতিফলন ঘটুক, ওগুলো নিয়ে আর লিখবো না। তবে ছন্দের যে গভীর প্রেমে আমি মজেছি তাতে ছন্দ থেকে আমার দূরে থাকাটা হয়তো আর হবে না। আমি ছন্দ নিয়েই থাকবো তবে অন্যভাবে। 

প্রত্যেক সাহিত্যেই কবিতার ছন্দ-প্রকৃতি নিয়ন্ত্রিত হয় ঐ ভাষার দ্বারা, ভাষার উচ্চারণ বৈশিষ্ট্য দ্বারা। জাপানি ছন্দও এই নীতির ব্যতিক্রম না। জাপানি ভাষায় স্বরবর্ণ সংখ্যা মাত্র পাঁচটি। এগুলোর সবগুলোই হ্রস্ব। জাপানি ভাষায় কোন দীর্ঘস্বর কিংবা অই্‌, উউ্‌ এর মতন বদ্ধস্বর নেই। জাপানি ভাষায় কোন ব্যঞ্জনস্বরের উচ্চারণও হসন্ত যুক্ত না, অর্থাৎ সবই মুক্তস্বর, কোন বদ্ধস্বর নেই। তাই জাপানি সাহিত্যে ছন্দের হিসেবে কোন প্রকার জটিলতাই নেই। ফলে জাপানি সাহিত্যে ছন্দশাস্ত্রও খুব একটা গড়ে অঠে নি।


জাপানি সাহিত্যে কবিতাগুলো হয়ে থাকে খুবই সরল প্রকৃতির। ছন্দবৈচিত্রতার দরুন জাপানি ছন্দকে শ্রেণিকরণ করা যায় না, তবে মাত্রার পর্বসংখ্যা অনুযায়ী জাপানি কবিতাকে মোটামুটি পাঁচটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় - হাইকু, তানকা, চোকা, সেদোকা এবং ইয়ামো।


হাইকু (একবচনে "হাইকি") একধরনের জাপানি কবিতা যাতে মাত্র তিনটি পঙ্‌ক্তিতে যথাক্রমে ৫, ৭ এবং ৫ মোরাসের মোট ১৭ মোরাসের সংক্ষিপ্ত পরিসরে একটি মুহূর্তে ঘটিত মনের ভাব প্রকাশ করা হয়। সাধারণত একটি ছবি বর্ণনা করার জন্য হাইকু লেখা হয়ে থাকে। মোরাস ও মাত্রা একই ব্যাপার নয়। কিন্তু ইযোরোপীয়রা ১৭ মাত্রার হিসেবে হাইকু লেখার সূত্রপাত করে। তাদের দেখাদেখি বাংলা ভাষায় ১৭ মাত্রার হাইকু লেখার প্রচলন হয়। মোরাস, দল ও মাত্রা এক-একটি ভাষার নিজস্ব শ্বাস অনুসারী সংজ্ঞায়িত হয়ে থাকে। সেই অনুযায়ী ১২ মোরাসে ১৭ দল হয় ইউরোপে ইমেজিস্ট আন্দোলনের পর ১৭ দলের পরিবর্তে আরো বেশী দলের হাইকু লেখা শুরু হয়েছে। জ্যাক কেরুয়াক প্রমুখ মার্কিন কবিগণ স্বীকার করেছেন যে মার্কিন উচ্চারণ জাপানি উচ্চারণ হইতে সম্পূর্ণ পৃথক। তাই তারা ১৭ দল ও তিন বাক্য বন্ধন অস্বীকার করে হাইকু লেখার সূত্রপাত ঘটান।


মাৎসু বাশো
র "old pond" বা পুরোনো পুকুর হাইকিটা দেখে নিইঃ
古池や蛙飛込む水の音
ふるいけやかわずとびこむみずのおと
উচ্চারণে একে বিন্যস্ত করলে পাইঃ
fu-ru-i-ke ya (৫)
ka-wa-zu to-bi-ko-mu (৭)
mi-zu no o-to (৫)
ইংরেজি অনুবাদঃ
old pond . . .
a frog leaps in
water’s sound
এর বাংলা রূপটা দাঁড়ায়ঃ
পুরোনো পুকুর
ব্যাঙের লাফ
জলের শব্দ।
এটা আক্ষরিক অনুবাদ, হাইকুর ছন্দ রক্ষা করা হয় নি।। হাইকুর ছন্দে রবি ঠাকুর একে ভাবানুবাদ করে লিখেছেনঃ
পুরোনো ডোবা,
দাদুরী লাফালো যে,
জলেতে ধ্বনি।
এবার এই ছবিটার বর্ণনা করে একটা হাইকির চেষ্টা করিঃ
বাদরো ঝরে
কালো কাকেরো 'পরে,
ভিজে গেলো যে!

Tuesday, January 10, 2012

হাইকু সিরিজ

হাইকু সিরিজ

-

১.
রাস্তা ছেঁড়া
অপলক নজর
খুঁজছে ডেরা ।।
২.
পিঁপড়ে দল
খাবার দেখলেই
নেবার ছল ।।
৩.
শীতের মাস
মাঠে ও ময়দানে
সবজি চাষ ।।
৪.
নয়া পরব
পোড় খাওয়া মাটি
হলো সরব ।।
৫.
ভ্রান্ত রথ
চলছে অগোছালো
হারাবে পথ ।।
৬.
বৃষ্টি-জল
স্ফটিক-সদৃশ
শীত-শীতল।।
৭.
মাছের ঝাঁক
স্রোতের বিপরীতে
নিয়েছে বাঁক ।।
৮.
জংলী ঘাস
আপনিই গজায়
করি না চাষ।।
৯.
কচুর পাতা
বাদল বরিষণে
ওটাই ছাতা।।
১০.
প্রাচীন বট
ধূসর পৃথিবীতে
সবুজ পট ।।
১১.
চতুর কাক
ভাতের ধান্ধায়
করছে হাঁক ।।
১২.
শিমুল তুলো
হাওয়ায় উড়লে
নরম ধুলো।।




Friday, July 30, 2010

বিশ্ব সাহিত্যে হাইকু

বিশ্ব সাহিত্যে হাইকু

ব্লগারের প্রোফাইল ছবি


যুগের সাথে সাথে সাহিত্য বিভিন্ন ধারায় প্রবাহিত হয়। কবি বা সাহিত্যিকের সাথে সাথে বদল ঘটে লেখার ধারার। কিন্তু কিছু ধারা চিরকাল অমলিন, অবিকৃত, বিশুদ্ধ থাকে।
বাংলা সাহিত্যে যেমন চর্যাপদ এখনো স্বমহিমায় সম্মান কুড়াতে সক্ষম ঠিক তেমনি বিভিন্ন ভাষার বিভিন্ন ধারা আছে যে গুলো যুগ যুগ ধরে ঠিক শূন্য বিন্দুতেই দাঁড়িয়ে আছে। যুগ যায় বছর যায় কিন্তু সাহিত্যের ধারা বদলায় না। এমন একটি ধারার নাম ‘হাইকু’।
'হাইকু' পৃথিবীর সংক্ষিপ্ততম কাব্যরূপ। ‘হাইকু’ বহুবচন। একবচন ‘হাইকি’ থেকেই ‘হাইকু’ এসেছে। জাপানী ভাষায় কবিতা লেখার একটি পদ্ধতি যা বিশেষ একটি রীতিকে মেনে লেখা হয়ে থাকে। পূর্বে হাইকুকে বলা হত 'হোক্কু' যার অর্থ ছিল 'রেঙ্গা' নামে শৃঙ্খলাবদ্ধ কবিতার প্রথমভাগ। ‘হাইকু’ বিশেষ একটি রীতির উপর দাঁড়িয়ে গড়ে ওঠে।তিনটি পংক্তিতে ৫-৭-৫ বিন্যাসে ১৭টি মাত্রায় এই কবিতা গুলো লেখা হয় । অর্থাৎ প্রথম লাইনে ৫টি, দ্বিতীয় লাইনে ৭টি আর শেষের লাইনে ৫টি সিলেবল নিয়ে মোট ১৭ সিলেবালে হাইকু রচিত হয়।
শুধু এই নিয়ম মানলে হাইকু রচিত হয় না; এর আরো একটি শর্ত আছে;- হাইকু হতে হবে প্রকৃতি নির্ভর। অর্থাৎ প্রকৃতিকে অবলম্বন করে গড়ে উঠবে হাইকুর শরীর। জাপানিরা ১৭ মাত্রার এই সংক্ষিপ্ত পরিসরের মধ্যেই বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের ছোট বড় সমস্ত কিছুর জায়গা দিয়েছেন। যাতে প্রকৃতিকে সামনে রেখে নানা বিদ বিষয় উপস্থাপিত হয়। এবার একটা হাইকু লক্ষ করি,
সোনালী ক্ষেত (৫)
কৃষাণের খাটুনি (৭)
ভরে না পেট (৫)
এখানে ৫-৭-৫ পুরোপুরি নিয়ম মানা হয়েছে। এটাই হাইকু।
জাপানিদের হাইকুর জনপ্রিয়তা দেশের গন্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম ইংলিশরা হাইকুকে আত্মস্থ করতে চেষ্টা করে কিন্তু তারা ব্যর্থ হয়। কারণ তাদের 'হাইকু' ৫-৭-৫ রীতিকে বজায় রাখাতে পারে নাই। ফলে সে সব 'হাইকু' কালের গহ্বরে হারিয়ে গেছে।
জাপানিদের দেখা দেখি বাংলাদেশেও 'হাইকু' চর্চা শুরু হয়; কিন্তু তা আর হাইকুর ৫-৭-৫ রীতিতে সীমাবদ্ধ থাকে নাই। এখানে এক লাইন লিখেও হাইকুর নামে চালিয়ে দেওয়া হয় যা হাইকুর রীতি বিরোধী। বাংলা সাহিত্যে হাসনাত আবদুল হাই 'কিওতো হাইকু' নামে একটি গ্রন্থ রচণা করেছিলেন। কিন্তু সেখানেও তিনি অনেক ক্ষেত্রে হাইকুর ৫-৭-৫ রীতি ধরে রাখতে পারেন নাই। তার রচিত কয়েকটি হাইকু :
১)
চড়ুইয়ের লুকোচুরি
গাছের শাখায়
ঝরছে পাতা সব
২)
নোঙ্গর করা তরী
দুলছে মৃদু ঢেউ
বরফ গলে ধীরে
৩)
বরফে এটো-কাঁটা
কাছেই একটি কাক
ঝাড়ছে শুধু ডানা
উপরের তিনটির কোনটিই ৫-৭-৫ নিয়ম মানে নাই। তাই এগুলো নিয়ে প্রশ্ন উঠাই স্বাভাবিক। এগুলো কি হাইকু? ৫-৭-৫ নিয়ম বলে এগুলো হাইকু নয়। তাহলে এগুলো কি? হতে পারে অনুকাব্য।
'হাইকু' সারা বিশ্ব জয় করুক, বেঁচে থাকুক স্বমহিমায়। হাইকুর সঠিক চর্চা হোক বাংলা ভাষায়।
আমার কিছু 'হাইকু' :
#১
রুদ্র বিকেল
ঝলমল তনুতে
দুঃখ ঝরে
#২
খেয়ার মাঝি
হাতে বৈঠা-লগি
মাছের চুক্তি
#৩
সোনালী ক্ষেত
কৃষাণের খাটুনি
ভরে না পেট
#৪
ফুল ফুটেছে
ঘ্রাণ নিয়েছে মাছি
ঠক বঞ্চিত
#৫
বাসর রাত
ঘুমহীন প্রাণীর
সার্থক স্বপ্ন
এখন এ পর্যন্তই...
সামনে আরো 'হাইকু' দেবো...
হাইকুর জয় হোক।
১৭ শ্রাবণ, ১৪১৭
জিগাতলা, ঢাকা


Saturday, July 25, 2009

হাইকু এবং প্রাসঙ্গিক ভাবনা

হাইকু এবং প্রাসঙ্গিক ভাবনা

লেখক শেখ নজরুল


( Please click here Read more » for the full article)

‘হাইকু’ জাপানি কবিতার একটি জনপ্রিয় ধারা। হাইকু, ‘হক্কু’ কিংবা ‘হাইকাই’ নামেও লেখা হয়েছে। হাইকুকে ‘রেঙ্গা’ নামেও অবিহিত করা হয়েছে। প্রচলিত হাইকুর গঠনশৈলী ৫-৭-৫, ৭-৭। ৫-৭-৫ গঠন শৈলীর রেঙ্গাকে বৃহদ পর্ব এবং ৭-৭ গঠন শৈলীর রেঙ্গাকে ছোট পর্ব হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তবে প্রকৃত হক্কুর বিষয় এবং বাস্তবতা আজো বিতর্কিত হলেও ধারণা করা হয় যে, রেঙ্গা নামটি জাপানি কবিতার ধ্রুপদি ধারণা থেকে নেয়া হয়েছিল যার শুরুর প্রক্রিয়া মননশীন চিন্তার রূপকল্প। তবে শুরুতে লেখার প্রক্রিয়াগত বিষয়বস্ততে কিছুটা সৃজণশীলতার অভাব ছিল। আধুনিক হাইকুর কবিরা প্রকৃতি রোমান্স, সেক্স, সহিংসতা, সমাজঘনিষ্ট বিষয়বলী তাদের হাইকুর অবয়বে তুলে ধরলেও প্রাচীন লেখকরা এটি পরিহার করতেন। ফলে তাদের লেখায় দুবোর্ধ্যতার বিষয়টি পরিলতি ছিল। আধুনিক হাইকু দুর্বোধ্য নয় ববং এটি পাঠকের কাছে ভীষণ সহজবোধ্য এবং জীবন ঘনিষ্ঠ। প্রাচীন হাইকুর কবিরা লেখার সংখ্যা বৃদ্ধিতে বেশি উৎসাহী ছিলেন কিন্তু আধুনিক কবিরা সংখ্যা বৃদ্ধির চেয়ে এর সাহিত্যমূল্যের প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আধুনিক এবং প্রাচীন দু’টি হাইকু থেকে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে।

প্রচীন- ‘এ সড়কে কোথাও
কোন জীবন নেই তবু
শরতের সন্ধ্যা আসে’
(মূল : মাতস্যুও বাশো/ অনুবাদ : লেখক)

আধুনিক- ‘মৃত্যুর সংবাদগুলো
ক্রমশ ছোট হয়ে আসছে
ছাপার অরে’
(মূল : ক্রিস্টেন ডেমিং/ অনুবাদ : লেখক)


উল্লেখিত প্রথম হাইকুটির চেয়ে দ্বিতীয়টি অনেক বেশি সমৃদ্ধ এবং তা গতানুগতা থেকে গতিশীলতা পেয়েছে। যা অন্তত ‘আহ!’ জাতীয় শব্দ দিয়ে শুরু হয়নি। তাই সবার পে একজন শক্তিশালী হাইকু লেখক হওয়া সম্ভব নয়।

Sunday, August 10, 2008

হাইকু ভূমিকা

হাইকু ভূমিকা

 

সবুজব্যাঙ কিরিগাছ চেরীফুল

হাইকু সম্পর্কে নতুন ভাবে কিছু বলতে চাইনা কারন এ সম্পর্কে বোদ্ধা অনেক। তবে একটা কথা বলবো, পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় চমৎকার সব হাইকু রচিত হলেও বাংলা ভাষায় হাইকু হয়নি খুব বেশী। বুদ্ধদেব চ্যাটার্জী তাঁর তিনশো বছরের হাইকু গ্রন্থের ভূমিকায় প্রথমেই বলেছেন, সুন্দরের প্রকাশ ব্যাপ্তিতে আছে আবার ক্ষুদ্র পরিসরেও আছে।তার পরে তিনি অবশ্য হাইকুর গঠন নিয়ে অন্য প্রসঙ্গ টেনেছেন। যে কথাটা অব্যক্ত রয়ে গেছে তা হলো, হাইকু কেবল ক্ষুদ্র পরিসরে সুন্দরের প্রকাশ নয়, ক্ষুদ্রতার মধ্য দিয়ে ব্যাপ্তির সৌন্দর্যকে উপলব্ধি করাও বটে। যেমন, একটি বনসাই বৃক্ষের দিকে তাকিয়ে আমরা এক বিশাল মহীরূহের ব্যাপ্তি ও বিন্যাশ উপলব্ধি করতে পারি। এটা জাপানের সৌন্দর্য চর্চার একটি বিশেষ দিক। আমার মনে হয়, বাংলায় হাইকুর প্রসার না ঘটার অন্যতম কারণ, কঠোর নিয়ম ও অতিসংক্ষিপ্ততার কারণে তিন লাইনে সেই ভাবের জানালাটি ঠিক মতো তৈরী করার ব্যর্থতা, যেখান দিয়ে ব্যাপ্তির সৌন্দর্য দেখার প্রয়াস থাকবে।
হাইকু পৃথিবীর সংক্ষিপ্ততম কাব্যরূপ। তিনটি লাইনে, থাকে ১৭টি সিলেবল, যা ৫-৭-৫ পদ্ধতিতে সাজানো। হাইকুর আর এক বৈশিষ্ট, এর সাথে ঋতুর সম্পৃক্ততা। পৃথিবীর অনেক ভাষাতেই, হাইকু কবিরা প্রথমেই আটকে গিয়েছেন এই কঠোর নিয়মের বেড়াজালে। তবে বর্তমানে বিদেশী ভাষায় রচিত হাইকুতে সিলেবলের শাসন নেই বললেই চলে। ঋতুর সম্পৃক্ততাও অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না। এমনকি তিন লাইনের জায়গায় এক বা দুই লাইনের হাইকুও লেখার দাবীও করছেন অনেকে।
আমি হাইকু রচনা করতে গিয়ে ১৭টি সিলেবলের স্থানে ব্যবহার করেছি ১৭টি শব্দ, কারণ আমার মনে হয়েছে সেটাই বাংলা ভাষায় রচিত হাইকুর নিয়মকে আরো সহজবোধ্য করতে পারে। ৫-৭-৫ পদ্ধতিতে, তিন লাইনের মৌলিক ব্যাকরণ অনুসরণ করেছি একান্ত নিষ্ঠায়। অনেক হাইকু ঋতু বিস্মৃত, কারণ অনেকের মতো আমিও মনে করি তা হওয়া যায়। জাপানের চার ঋতুর তুলনায় আমাদের রয়েছে ছয় ঋতু, কাব্যের বাতাবরণ দেশে দেশ ভিন্ন হবে সেটাই স্বাভাবিক। বিদেশী ভাষায় হাইকু রচনার ক্ষেত্রে, হাইকু- শব্দটি, হাইকু ও সেনরিউ এমনকি তানকা, এ সব মিলিয়ে ব্যাপক অর্থেই ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে শব্দের আড়ালে শব্দের যে অন্য অর্থ আরোপ বা অন্য ইমেজ সৃষ্টি করা, তা বজায় রেখেছি, কারণ এটাই হলো হাইকুর আত্মা।
পরিশেষে বলবো, দীর্ঘ দুই দশকের  প্রবাস জীবনে জাপানীদের খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে।তিন পঙক্তির জানালা দিয়ে বিশ্বকে দেখার যে জাপানী প্রয়াস, সেই জানালা দিয়ে যাতে বাঙ্গালীরাও সহজে উঁকি দিতে পারেন, আমার হাইকু তারই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা।
                                                                                ডঃ শেখ আলীমুজ্জামান
                                                                                     টোকিও,    জাপান
                                                                                    ১০ই আগষ্ট, ২০০৮
 
(ডঃ শেখ আলীমুজ্জামানঃ জাপান প্রবাসী  চিকিৎসক, গবেষক ও লেখক। কৈশোরে সেবা প্রকাশনীর নিয়মিত লেখক হিসেবে, সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা- তিন। প্রবাসের কর্মব্যস্ততায় দীর্ঘ দিনের কলম বিরতির পরে আবার লেখালেখির জগতে ফেরা।) - সম্পাদক, অভিবাস।

Source: http://www.japanbangladesh.com